পাসওয়ার্ড কঠিন করবেন যেভাবে

ফোনের লক থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন অ্যাকাউন্ট, ব্যক্তিগত ইমেইল কিংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি। সবখানে নিরাপত্তার জন্য মৌলিক বিষয় পাসওয়ার্ড। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় দেখা গেছে গড়ে একজন মানুষের এখন প্রায় ১০০টি অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড সামাল দিতে হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তার উপর এখন অনেকেই নিজের অসাবধানতার কারণে অ্যাকাউন্ট, ব্যক্তিগত তথ্য খুঁইয়ে থাকেন। পাসওয়ার্ড বেশ কিছুদিন পরপর বদলানো হচ্ছে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি, তবে শক্ত বা কঠিন পাসওয়ার্ড দেয়াও আরেকটা বিকল্প হতে পারে। সে কারণে আজকের পোস্টে রয়েছে কঠিন পাসওয়ার্ড দেয়ার জন্য কিছু কৌশল। কঠিন পাসওয়ার্ড দিতে হলে আপনি কিছু বিষয় অনুসরণ করতে পারেন-

শক্ত কিন্তু মনে রাখার মত পাসওয়ার্ড দেয়ার জন্য কিছু পরামর্শে

  • পাসওয়ার্ড দেওয়ার সময় বুঝে শুনে পাসওয়ার্ড দিবেন। চেষ্টা করবেন একটু বড় দেওয়ার, আর যেই পাসওয়ার্ড আপনি মনে রাখতে পারেন সেইটা। পাসওয়ার্ড কঠিন করার জন্য এমন পাসওয়ার্ড দিবেন না যেটা নিজেই মনে রাখতে পারেন না। কারণ আপনার জন্য যেটা কঠিন, অনেকসময় মেশিনের জন্য সেটা সহজ। আপনি ভাবতে পারেন ইচ্ছামত সংখ্যা, সাংকেতিক চিহ্ন ইত্যাদি দিয়ে আপনার পাসওয়ার্ডকে আপনি অনেক সুরক্ষিত করেছেন। কিন্তু মেশিনের অ্যালগরিদমে আপনার দেয়া পাসওয়ার্ডই অনেক সময় আগে চলে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্রুট ফোর্স অ্যাটাকের জন্য আপনার পাসওয়ার্ড দুর্বল।
  • আবার একেবারে সোজা পাসওয়ার্ড দিয়ে দিলে সেটা মানুষ ও মেশিন দুই ক্ষেত্রেই সহজবোধ্য হয়ে যায়। তাই পাসওয়ার্ড দেয়ার সময় এমন পাসওয়ার্ড দিবেন যা আপনি মনে রাখতে পারেন; বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষরের মিশ্রণ, সাংকেতিক চিহ্ন, সংখ্যা সবই ব্যবহার করতে পারেন, তবে এমন পাসওয়ার্ড দিবেন যা আপনি সহজেই বুঝেন। গবেষণায় দেখা গেছে একটা সহজ মানুষবোধ্য পাসওয়ার্ডও ব্রুট ফোর্সের অ্যালগরিদমে অনেক পরে আসে।
  • সতর্কতায় বলা হয়েছে কমন কী-বোর্ড প্যাটার্ন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে, কিন্তু আপনি ইচ্ছা করলে আনকমন কী-বোর্ড প্যাটার্ন ব্যবহার করতেই পারেন! যেমন: আপনি যদি কী-বোর্ডে “W” অক্ষরের প্যাটার্ন ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার পাসওয়ার্ড হয় “1qazsedcft6”, আরেকটু কঠিন করার জন্য আমরা প্রথম আর শেষ অক্ষরকে বড় হাতের করে দিতে পারি, অর্থাৎ “1QazsedcfT6″। ১১ অক্ষরের একটি মোটামুটি ভালো পাসওয়ার্ড।
  • আবার পাসওয়ার্ডকে কঠিন করার জন্য আপনারা সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করতে পারেন, সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করার জন্য ইমোটিকন বা স্মাইলির সাহায্য নিতে পারেন! যেমন: আগের বানানো পাসওয়ার্ডের সাথে যদি আমরা “;)” লাগাই, অর্থাৎ “1QazsedcfT6;)”, তাহলে এটা ১৩ অক্ষরের মোটামুটি একটা কঠিন পাসওয়ার্ড।
  • আপনি কিছু কমন কিছু কনসেপ্টকেও একটু আনকমন করে নিয়ে আপনার পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। উদাহরণস্বরুপ আপনার অ্যামাজনের অ্যাকাউন্টের জন্য আপনি “ABT2_uz_AMZ!”, ফেসবুকের জন্য “Pwrd4Acct-Fb” পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
  • পাসওয়ার্ডকে কঠিন কিন্তু মনে রাখার মত করার জন্য আপনি একটা বাক্যকে সংকোচন করে সেটাকে পাসওয়ার্ড দিতে পারেন। যেমন, “I used to go to Ramna Park every morning at 6 a.m.” → “Iu2g2RPem@6am”

পাসওয়ার্ডকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু সতর্কতা

  • প্রতিটা অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। অনেক সময় অনেকে পাসওয়ার্ড ভুলে যায় দেখে সব অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে যাতে ভুলে যাওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সেইসাথে একাধিক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড একই হওয়ায় লগ-ইন করাও নিজের কাছে সহজতর হয়ে যায়। কিন্তু এটা যতটুকু আপনার কাছে সহজ হয়ে যায়, আপনার পাসওয়ার্ড চোরের কাছে ততটুকুই সহজ হয়ে দাঁড়ায় আপনার সকল তথ্য নেয়ার জন্য, কোনোমতে একটা পাসওয়ার্ড জানলেই হলো, ব্যস, কেল্লা ফতে।
  • https://www.traditionrolex.com/47
  • পাসওয়ার্ড সবসময় একটু বড় দেয়ার চেষ্টা করবেন, ৮ থেকে ১৬ অক্ষরকে স্ট্যান্ডার্ড বলা যায়। কারণ অক্ষর বেশি হওয়াতে এটার বিন্যাস সংখ্যাও বাড়ে, সে কারণেই এটা বের করতেও বেশ সময় লাগে। আপনি মনে রাখতে পারলে ৩২ অক্ষরের পাসওয়ার্ড দিন, তাতেও সমস্যা নেই! অ্যালগরিদমের এনট্রপি যত বেশি, পাসওয়ার্ড বের করা তত দুরূহ।
  • পাসওয়ার্ডে ছোট হাতের অক্ষর, বড় হাতের অক্ষর, সংখ্যা, সাংকেতিক চিহ্ন ইত্যাদি ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ডের সব ক্যারেক্টার ছোট হাতের অক্ষর বা নাম্বার দেয়া বোকামী, শুধু বোকামী বললে ভুল হবে, বেশ বড় ধরণের বোকামী। পাসওয়ার্ডকে শক্ত করার জন্য সবই ব্যবহার করুন।
  • সহজেই ধারণা করা যায় এমন কিছুকে পাসওয়ার্ড হিসেবে দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কারণ, মানুষ আপনার পাসওয়ার্ড জানতে হলে আগে নিজে ভাববে, সাধারণকিছু, যেমন আপনার জন্মতারিখ, স্কুল/কলেজ/ইউনিভার্সিটিতে আপনার রোল নাম্বার, আপনার মোবাইল নাম্বার, আপনার গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডের নাম ইত্যাদি দিয়ে আগে চেষ্টা করবে, চেষ্টা অসফল হলে তারপর মেশিনকে নির্দেশ দিবে।
  • ডিকশনারির শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অনেক মানুষ পাসওয়ার্ডের জন্য মনে করেন অভিনব কিছু দিবেন আর সেটা ভেবে বেশ অভিনব(!) পাসওয়ার্ড দিয়ে থাকেন, যেমন, password, incorrect, letmein ইত্যাদি। এটা চরম বোকামী।
  • সুবোধ্য প্রতিস্থাপনের উপর নির্ভর করবেন না। অনেকে সংখ্যা আর অক্ষর মেশাতে যেয়ে একদম সহজেই বোঝা যায় এমনভাবে পরিবর্তন করে থাকেন, যেমন, Dictionary →Dicti0nary. এটা একেবারে সহজেই বোঝা সম্ভব, তাই এমন প্রতিস্থাপন থেকে বিরত থাকুন।
  • সহজবোধ্য কী-বোর্ড প্যাটার্ন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। অনেকে পাসওয়ার্ড যাতে ভুলে না যান তাই কমন কিছু কী-বোর্ড প্যাটার্ন যেমন qwerty, zxcvbnm, asdfgh, 1234567890, 14789325 ইত্যাদি দিয়ে থাকেন। এটাও আরেকটা চরম বোকামী।
  • ফিশিং এর ফাঁদে পড়বেন না। বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ব্যাপকহারে বেড়েছে শুধুমাত্র ফেসবুকের কারণে। অনেক মানুষ আছেন যারা ফেসবুক ছাড়া অন্য কোনো কারণে নেট ব্যবহার করেই না। আর বাংলাদেশের একটা কতিপয় অনভিজ্ঞদের জন্য ট্রেন্ড টপিক হচ্ছে ফেসবুক হ্যাক ❗ । এদের কেউই আজ পর্যন্ত ফেসবুক হ্যাক করে নি, বড়জোর কিছু অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেছে, যদিও সেটা সেটা হ্যাকিংএর পর্যায়ে পড়ে না, সেটা হচ্ছে ফিশিং। হঠাৎ কারো দেয়া লিংকে অ্যাক্সেস করার জন্য আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্ট দিয়ে লগ-ইন করতে বলছে, যদি পেজ/সোর্স/লোকটা আপনার বিশ্বাসভাজন না হয়, তাহলে লগ-ইন করবেন না। করলে আপনার পাসওয়ার্ড ওর কাছে চলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
  • আপনার কম্পিউটার সুরক্ষিত রাখুন। আপনার কম্পিউটার ম্যালওয়ার, কী-লগার ইত্যাদি মুক্ত রাখুন। এগুলো আপনার পিসিতে থাকলে আপনার দেয়া প্রত্যেকটা কী-স্ট্রোক আরেকজনের কাছে চলে যাওয়া অস্বাভাবিক না। আপনার পিসিকে এগুলো মুক্ত রাখতে ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন।
  • ২-ধাপ সুরক্ষা ব্যবহার করুন। যেখানে ২-ধাপ সুরক্ষা অর্থাৎ 2 step security বা 2 step verification ব্যবহার করা সম্ভব, সেখানে এটা ব্যবহার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *